মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার
বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ই মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস অর্জন করে থাকে। বাঙালির ইতিহাসে তাইতো ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ সৃষ্টি শুরু থেকে এদেশের মানুষ বিভিন্ন রকম আন্দোলনের মাধ্যমে নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি জাতি ছিল আত্ম সংগ্রামী জাতি তারা সকল অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সর্বদা প্রতিবাদী ছিল। তাইতো বাঙালির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিভিন্ন রকম ঐতিহাসিক দিবস স্মরণীয় দিনের উল্লেখ পাওয়া যায় যে দিন গুলোতে মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। বাঙালি ইতিহাস এরকম একটি শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে এর ৭ ই মার্চ যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণটি স্বাধীনতার মূল মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। কেননা এই ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিল তিনি বলেছিলেন তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই তোমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো। এই ভাষণের সূত্র ধরে মূলত বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
যখনই আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় ৭ই মার্চ তখনই মনে পড়ে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রবিবার দিনটি। সে দিনটিতেই রচনা হয়েছিল মুক্তি কামী বাঙালির চেতনার ক্ষণ। কারণ সে দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিল ১৮ মিনিটের একটি অগ্নিঝরা ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ লিখিত আকারে তুলে ধরা হলো ।
ভাইয়েরা আমার
৭ই মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ; ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) প্রদত্ত ভাষণ:
আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়,আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম,খুলনা,রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়,বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকেও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে,আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়,২৩ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে ১০ বছর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন,তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন,গণতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল,নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সাথে দেখা করেছি।
আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাকে অনুরোধ করলাম,১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি প্রথম জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না,তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন,সপ্তাহে মার্চ মাসে সভা হবে। আমি বললাম ঠিক আছে,আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসব। আমি বললাম অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব—এমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম,যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে,আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।
ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন,আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে,আলোচনার দরজা বন্ধ নয়,আরও আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতার সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম-আপনারা আসুন,বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরি করব।
তিনি বললেন,পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসে তাহলে কসাইখানা হবে অ্যাসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলা হবে, যদি কেউ অ্যাসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, অ্যাসেম্বলি চলবে। তারপর হঠাৎ ১ তারিখে অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম,আমি যাব। ভুট্টো বললেন,তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে,দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্ধ করার পর এদেশের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল।
আমি বললাম,শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করুন। আমি বললাম,আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল,তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য স্থির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। কী পেলাম আমরা? আমরা আমাদের পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য,আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে—তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু-আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। টেলিফোনে আমার সাথে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম,জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব,আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট,দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের ওপর,আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে,কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে,আপনি আসুন, দেখুন,বিচার করুন। তিনি বললেন, নাকি স্বীকার করেছি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স হবে।
আমি:
আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি কীসের রাউন্ড টেবিল, কার সাথে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাদের সাথে বসব? হঠাৎ আমার সাথে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টার গোপন বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন তাতে সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপর দিয়েছেন,বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন।
ভাইয়েরা আমার:
২৫ তারিখে অ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,১০ তারিখে ওই শহিদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসি-তে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছেন,আমার দাবি মানতে হবে। প্রথমে সামরিক আইন, ‘মার্শাল ল’ withdraw করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশের কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়,যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে সেজন্য সমস্ত অন্যান্য যে জিনিসগুলো আছে, সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা,গোরুর গাড়ি, রেল চলবে,লঞ্চ চলবে—শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা কোনোকিছু চলবে না। ২৮. তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু- আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।
আর যে সমস্ত লোক শহিদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিকে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর এই ৭ দিনের হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেক শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হচ্ছে, ততদিন খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো— কেউ দেবে না। শুনুন, মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি, অ-বাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর, আমাদের যেন বদনাম না হয়।
মনে রাখবেন, রেডিয়ো-টেলিভিশনের কর্মচারীরা যদি রেডিয়োতে আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিয়ো স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। ২ ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মাইনেপত্র নিতে পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সাথে দেওয়া-নেওয়া চলবে না।
কিন্তু যদি এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণ নয়, যেন রচিত হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য। কী নেই এই ভাষণে! বাঙালি জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার ধারাবাহিক করুণ ইতিহাস আছে।
প্রয়াত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, ‘মহাকাব্যের সামগ্রিকতা ধরা পড়েছে এই ভাষণে। আর এই ভাষণদাতাও মহাকবি হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে রাজনৈতিক দিকের মতো একটি দার্শনিক দিক স্পষ্ট। তিনি বাঙালি জাতিকে তো বটেই, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য একটি দিগদর্শন রেখে গেছেন। এই দর্শনটি হলো, সব পীড়ন থেকে মুক্তির দর্শন। অহিংস অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে উত্তরণের দর্শন।’
আবদুল গাফফার চৌধুরী আরো লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের দ্বারা মন্ত্রমুগ্ধ সারা জাতিকে তাঁর পেছনে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তারপর ধ্বংসের দিকে নয়, তাদের পৌঁছে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার নতুন উষার স্বর্ণতোরণে।’ প্রয়াত ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খানের ভাষায়, ‘…তা বর্ণনা করার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া আছে আবেগ, রক্ত ঝরানোর নির্মম স্মৃতি এবং তার সঙ্গে গণতান্ত্রিক আশা-প্রত্যাশার ন্যায্যতা, আছে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ এবং যুক্তির জোরালো উপস্থিতি। এসব মিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি মানবিক বোধের শ্রেষ্ঠত্ব, গণতান্ত্রিক চেতনার উজ্জ্বলতা এবং নিপীড়িত মানুষের স্বাধিকার অর্জন ও আর্থ-সামাজিক মুক্তির এক অনন্য দলিল হয়ে উঠেছে। এসব গুণের জন্য শুধু বাঙালি নয়, গোটা বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ পরিস্থিতির প্রকৃত সত্য অনুধাবনে সহানুভূতিশীল করেছে।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষের ভাষায়, ‘একটি ভাষণ গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার স্বপ্নে, মুক্তির সংগ্রামে। একটি ভাষণ বাঙালির ঘরে ঘরে প্রতিটি বাঙালির অন্তরে পৌঁছে দিল স্বাধীনতার বার্তা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এ সূত্রেই অনন্য, অতুলনীয় ও ঐতিহাসিক। ভাষণটি ছিল একটি জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের মৌন শক্তি ও রাজনৈতিক দর্শন। অন্যদিকে তা জাগ্রত করেছিল গোটা জাতিসত্তাকে—বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সব নৃগোষ্ঠীর মানুষকে।’
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা