দেশব্যাপী চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে বুধবার (০৯ আগস্ট)। এবারের মতো তথ্য সংগ্রহকারীরা বুধবার বাড়ি বাড়ি যাবেন। ইতিমধ্যে যারা নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম লেখানোর জন্য আবেদন করেছেন তার মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে নতুন আবেদনের সংখ্যা সব থেকে বেশি। আর সব থেকে কম আবেদন জমা পড়েছে বরিশাল অঞ্চলে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। ইসি সূত্রে জানা যায়, এইবার হালনাগাদে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ইসি। ৭ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ।
এরমধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সব থেকে বেশি ২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৩ জন। আর সব থেকে কম তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে ৫৭ হাজার ২৫৮ জন নাগরিকের। এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন, রাজশাহীতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১১২ জন, খুলনায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬১ জন, সিলেটে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৫ জন, রংপুরে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৪ জন, ময়মনসিংহে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৮ জন, ফরিদপুরে ৮৪ হাজার ৫৩৯ জন এবং কুমিল্লা অঞ্চলে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩০ জন।
এছাড়া এ সময়ে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন মোট ৩৬ হাজার ৩৪১ জন নাগরিক। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা ক্যাম্পেইনের মতো। ৯ আগস্ট পর্যন্তই তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তারপর ২০ আগস্ট থেকে এগুলো রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হবে।
তবে ৯ আগস্টের পর তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়িতে বাড়িতে না গেলেও, কেউ যদি এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে তথ্য দিতে না পারেন তাহলে বছরের যেকোনো দিন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় গিয়ে তথ্য দিয়ে ভোটার হতে পারবেন। এছাড়া চলমান হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ করার পর যেখানে নিবন্ধনের কাজ হবে সেখানে গিয়েও নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে বলেও জানান ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব। ইসির সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন জানান, আমরা এবার যেই সংখ্যক নতুন ভোটারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে হালনাগাদের কাজ শুরু করেছি তাতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করি।
সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হচ্ছে তাদের তথ্য নিচ্ছে ইসি। গত ২৫ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ময়মনসিংহে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নেওয়ার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে বুধবার। ইসি জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ শেষে ২০ আগস্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে কম্পিউটার ডাটা এন্ট্রি কাজ ৩ ধাপে শরু হবে। প্রথম ধাপে ১৮৩টি উপজেলায় ২২ দিনে, দ্বিতীয় ধাপে ২১৬ টি উপজেলায় ২৮ দিনে, তৃতীয় ধাপে ১১৮টি উপজেলায় ২১ দিনে, মোট ৫১৭টি উপজেলায় তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এটি শেষ হবে ৫ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা থানা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারের নাম কর্তন করা যাবে। এরপর ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদকৃত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। দাবি আপত্তি ও সংশোধনের জন্য দরখাস্ত দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ জানুয়ারি। দাবি আপত্তি ও সংশোধন নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ২২ জানুয়ারি। দাবি, আপত্তি ও সংশোধনীর জন্য দাখিলকৃত দরখাস্তের উপর গৃহীত সিদ্ধান্ত সন্নিবেশনের শেষ তারিখ ২৭ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি।
এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে টার্গেট হচ্ছে মৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো। কেননা দুই বছর আগে নিবন্ধন তথ্য নিতে গিয়ে কম বয়সীদের অনাগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সেই সঙ্গে নারী ভোটারদের অনীহা ও মৃতদের বাদ দেওয়ার কাজেও সফলতা পায়নি সংস্থাটি। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে ইসি।
শেষ দিনে ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাদপড়া ও নতুন ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার আশা করছে ইসি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে এবং যেসব নাগরিক যোগ্য হওয়ার পরও বিভিন্ন কারণে ভোটার হতে পারেননি কেবল তাদের ভোটার করা হচ্ছে। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া এ সময় মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ও ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ১৮ মতো ভোটার রয়েছে।”