বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনকে নাজেহালের ঘটনায় বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ আলী হোসাইনকে প্রত্যাহারের সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার দুপুরে ওই সুপারিশপত্র সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্তি রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ।
ইউএনও’র ঘটনা ছাড়াও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের বিরুদ্ধে সার্কিট হাউসের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করা ও লঞ্চের ভাড়া না দেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এনিয়ে ওই বিচারকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তাই আইন মন্ত্রণালয় ওই বিচারককে অন্যত্র প্রত্যাহারের সুপারিশ জানিয়ে পত্রটি সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়েছেন।
এর আগে গত ২৩ জুলাই ইউএনও তারিক সালমনকে মানহানির মামলায় জামিন নামঞ্জুরের কোনো আদেশ ওইদিন দেওয়া হয়নি মর্মে সুপ্রিম কোর্টে নিজের ব্যাখ্যা পাঠিয়েছিলেন বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন।
ওই লিখিত ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, ‘আদালতের কার্যপ্রণালী শেষে এজলাস ত্যাগ করে খাসকামরায় এসে শুনি ইউএনও’র জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তার জামিন আবেদন একটিবারের জন্যও নামঞ্জুর করা হয়নি। ফলে জেলহাজতে পাঠানোর কোন প্রশ্নই উঠে না।’
ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘ইউএনও’র পক্ষে নথি দাখিল হলে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান হলে জামিনের আবেদন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫ ধারার আবেদন আইনানুগ প্রক্রিয়া পালনপূর্বক মঞ্জুর ক্রমে জামিন প্রদান করা হয়।
‘ইউএনও’র আদালত কক্ষ ত্যাগের পরে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পরিহারের জন্যই আমি তৎক্ষণাৎ জামিনের দরখাস্তের আদেশ না দিয়ে নথি দাখিল হলে শুনানি শেষে আদেশ দেয়া হবে বলে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি’ ব্যাখ্যায় যোগ করা হয়।
বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বলেন, ‘মামলাটির শুনানি চলাকালে উৎসুক জনসাধারণের রোষানল হতে ইউএনও’র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শুনানি মুলতবি করা হয়। ইউএনও’র আইনজীবী মোখলেছুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র (নথি) দাখিল করতে বলি এবং মৌখিক আদেশ দেয়া হয় যে, নথি দাখিলের পরে পুনরায় শুনানি হবে। আমি তখন ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসাতে বলি। আদালতে কর্তব্য পালনরত পুলিশ সদস্যগণ ইউএনও’র সার্বিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাধ্যমত চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘ইউএনওকে আদালতের কাঠগড়া হতে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের কক্ষে বসানোর জন্য আদালত কক্ষের এক দরজা দিয়ে বের হয়ে বারান্দা ব্যবহার করে অন্য দরজা দিয়ে আদালত কক্ষে আনতে হয়েছে। ওই সময় মিডিয়ার কর্মীরা বা অন্য কেউ কোনো ছবি তুলেছেন কিনা তা অবলোকন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই সময়ে কী সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তাও আমি বিচারকার্য পরিচালনাধীন থাকায় তা জানতে পারিনি।’
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০১ ধারায় মানহানির মামলা করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ সাজু।
গত ৭ জুলাই ওই মামলা আমলে নিয়ে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) অমিত কুমার দে ইউএনওর বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। সমন পেয়ে গত ১৯ জুলাই সিএমএমের আদালতে ওকালতনামা দাখিল করে জামিন চান ইউএনও।
কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, ইউএনও’র জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। ইউএনও-কে জেলহাজতে নেয়া হচ্ছে এমন ছবিও প্রকাশিত হয়। তবে এর কিছুক্ষণ পরে জামিন মঞ্জুর করা হয়। পরে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।