ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের আশা ভঙ্গ করে তৃতীয় বার মসনদ নিশ্চিত করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে দলটি ২১৫টি কেন্দ্রে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি ৭৫টি কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে। আর বাম জোট মাত্র একটি কেন্দ্রে এগিয়ে। তৃণমূল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৩৬ শতাংশ। কংগ্রেস আড়াই ও সিপিএম সাড়ে চার শতাংশ ভোট পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এবার আট দফায় ভোট হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের পাশাপাশি গোটা সংঘ পরিবার অনেকটাই নিশ্চিত ছিল জয় নিয়ে। অনেক হিসাব-নিকাশ, অনেক পরিকল্পনা সত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফলের কাছাকাছিও যেতে পারেনি পদ্মের ফুল। রবিবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। গণনাকৃত ভোটের প্রায় ৫০ শতাংশ পেয়েছে তৃণমূল। অতীতে আর কোনো নির্বাচনেই এত ভোট পাওয়ার রেকর্ড নেই দলটির। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৪৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১১টিতে জিতেছিল তৃণমূল। তার আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে ১৮৪টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৪০ দশমিক ৩ শতংশ ভোট পেলেও এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট কমে গেছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভা নির্বাচনের হাইভোল্টেজ কেন্দ্র ছিল নন্দীগ্রাম। এই আসনে নির্বাচন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার এক সময়ের সহযোগী শুভেন্দু অধিকারী। সবার নজর ছিল এই আসনে কে জিতবেন। সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। এগিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় তিনি জিতেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর হিসাব বদলে যায়। নির্বাচন কমিশন বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে বিজয়ী ঘোষণা করে। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, নন্দীগ্রামে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারীই। নন্দীগ্রামে এক লাখ নয় হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু, আর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক লাখ সাত হাজার ৯৩৭ ভোট পেয়েছেন বলে খবরে বলা হয়। ফল উল্টানোর পেছনে নির্বাচন কমিশনের কারচুপি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, ‘কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। গণনায় কারচুপি করা হয়েছে। জয়ী ঘোষণা করার পরও ফল বদলানো হয়েছে। সেই কারচুপি কী, আমি খুঁজে বের করব। আদালতে যাব। তিনি আরও বলেন, ‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মাথা পেতে নিলাম। ভালোই হলো, আমাকে রোজ ওত দূরে যেতে হবে না।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক সমালোচনা করেন মমতা। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে সুপ্রিম কোর্টে যাবার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।