জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে হুল ফোটানো বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা। বৃহস্পতিবার আলাসকায় বিশ্বের শীর্ষ দুই শক্তির মুখোমুখি বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকতে দেখা গেছে। এতে দুই দেশের মধ্যকার টানাপোড়েন খুব শিগগির মিটে যাবে বলে মনে হচ্ছে না। বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি এমন খবর দিয়েছে। অংকোরিজে দুদিনের বৈঠকের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিন বলেন, চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।তিনি বলেন, জিনজিয়াংসহ চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপে মার্কিন আলোচনায় গভীর উদ্বেগ থাকবে। সেখানে উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিসসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে তিনি এসব কথা বলেন। ব্লিংকিন বললেন, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা ও আমাদের মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে। বেইজিং হংকংয়ের স্বাধীনতা বাতিল করতে যাচ্ছে বলে মনে করে ওয়াশিংটন। বেইজিংও কড়াভাবে তার জবাব দেয়। ওয়াং ই হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করছি। জবাবে আমরা কঠিন পদক্ষেপই নেব। চীনা কর্মকর্তাদের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে কথা বলেন ওয়াং। তিনি বলেন, কেউ তার অতিথিদের ঠিক এভাবে স্বাগত জানায় বলে মনে হয় না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার পর সেই উত্তেজনা এখনও তুঙ্গেই রয়েছে। দুই দেশের দ্বন্দ্ব বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। হংকংয়ের অধিকারসহ প্রযুক্তি থেকে প্রতিরক্ষা— সব কিছুতেই তাদের মতপার্থক্য চলছে। শীতল তাপমাত্রার অংকোরিজে দুই দেশের তিন অধিবেশনের বৈঠক অনেক বেশি নিরপেক্ষ হবে বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে এই বৈঠক শুরু হয়েছে, তাতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে খুব বেশি একটা প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না। পূর্বসূরির মতো চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছেন বাইডেন। ব্লিংকিন বলেন, এটি একুশ শতকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক পরীক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে। বৈশ্বিক মঞ্চে কূটনৈতিকভাবে যুক্ত থাকার কথা জানিয়ে আসছেন বাইডেন। যেখানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও মিত্রদের হেয় করার নীতি বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সংঘাত চায় না। তবে কঠোর প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানাচ্ছে। তাকে শীতল যুদ্ধকালীন মানসিকতা ছাড়তে আহ্বান জানান ওয়াং। বললেন, বেইজিংও কোনো সংঘাত চায় না, দ্বন্দ্ব চায় না। আমেরিকার অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হওয়ার পর তিনিও পাল্টা ভর্ৎসনা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্র যাতে নিজের গণতন্ত্র বাকি দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করে, সেই দাবি করেন ওয়াং। তিনি বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর একটি বড়সংখ্যকই আমেরিকার মূল্যবোধকে বৈশ্বিক মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যান্য দেশকে দমিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র নিজের সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন ওয়াং ই। তিনি বলেন, স্বাভাবিক বাণিজ্যিক লেনদেন বাধাগ্রস্ত করতে এবং চীনের বিরুদ্ধে কয়েকটি দেশকে হামলায় উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কথিত জাতীয় নিরাপত্তার ধারণার অপব্যবহার করছে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এখানে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের হত্যা করা হচ্ছে।’ জবাবে সুলিভান বলেন, আমরা সবসময় আমাদের জনগণ ও বন্ধুদের নীতির পক্ষে দাঁড়াই। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশ একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জবাবে ব্লিংকিন বলেন, আমাকে বলতে হচ্ছে— আপনি যার বিবরণ দিলেন, তা থেকে ভিন্ন কিছুই আমি শুনছি। আপনার সরকারের নেওয়া বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথাই আমাকে শুনতে হয়েছে। বৈঠকে থাকা বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চীনা প্রতিনিধিত্ব ছিল লোকদেখানো। তারা মূল বিষয় বাদ দিয়ে নিজেদের প্রদর্শনীতেই বেশি আলোকপাত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকিনের এশিয়ায় মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।