করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ৫০ শতাংশ যাত্রী বহনে সরকারের নির্দেশনায় বাস সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীতে। বিশেষ করে অফিস শুরু ও শেষ হওয়ার সময়ে এ সংকট চরম আকার ধারণ করে। এ সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পোসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সময়মতো বাস না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করেছেন শত শত যাত্রী। এছাড়া সড়কে গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক যাত্রী। সড়কে যখন এমন অবস্থা তখন নৌপথের যাত্রীদের লঞ্চ ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অতি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীদের স্থানান্তর না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া ১১ এপ্রিলের পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে অফিস-আদালতসহ কর্মসংস্থানের সব কার্যক্রম খোলা রেখে এবং পর্যাপ্ত গণপরিবহণের ব্যবস্থা না করে বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে আগের ভাড়ায় যত সিট তত যাত্রী পদ্ধতিতে ফেরত আসার দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের নিষিদ্ধের ঘটনায় রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক, ধানমন্ডি ও শাহবাগ এলাকায় সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। এতেও ওইসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যাত্রীদের দুর্ভোগের এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, রাজধানীতে বাসের সংকট থাকলেও দূরপাল্লার রুটে সেই সমস্যা নেই। তবে দুই আসনে একজন যাত্রী বহনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো রুটে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। অন্য সময়ে যাত্রী কম থাকায় সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাসে কম ভাড়া নেয়া হতো। এখন সেই ছাড় দিতেও নারাজ পরিবহণসংশ্লিষ্টরা। আগে যে রুটে ৪৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো এখন সেখানে ৮০০ টাকা নেয়া হয়েছে। এতেও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। তবে করোনা সংক্রমণের চলমান প্রেক্ষাপটে সরকার জনস্বার্থে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহণের ভাড়া সমন্বয় করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অভিযোগ পাচ্ছি অনেক পরিবহণ সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছে না। আবার অনেকেই মানছে। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমি পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের অর্ধেক আসন খালি রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমন্বয় করা ভাড়ায় গণপরিবহণ চালনার আহ্বান জানাচ্ছি। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী এবং নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিআরটিএ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। যাত্রীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গণপরিবহণ যেন নতুন করে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্র হিসাবে বিস্তৃতি ঘটাতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে। জনস্বার্থেই অর্ধেক আসন খালি রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহণ চলছে। এ পরিস্থিতিতে অস্থিরতা প্রদর্শন না করে নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচলের সিদ্ধান্ত মেনে চলার জন্য যাত্রী সাধারণকে আমি ধৈর্য ধারনের আহ্বান জানাচ্ছি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলীতে যাত্রীচাপ খুব একটা নেই। বেশিরভাগ বাস গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে দরজা বন্ধ করে গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে মাঝপথের বাস স্টপেজ শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট ও ফার্মগেট এলাকায় শত শত মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু সময় পরপর বাস থামলেই মানুষকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিআরটিসির কিছু বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়েও বহন করতে দেখা গেছে। ঢাকা বিমানবন্দর, মহাখালী, কাকরাইল, শাহবাগ ও ফার্মগেট এলাকায় বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা সকালে ক্ষিলখেতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভও করেছেন। এদিন সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা খিলক্ষেত এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় দুই পাশের সড়কে কয়েকশ’ ছোট-বড় গাড়ি আটকা পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। জিয়াউর রহমান নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সকালে অফিস টাইমে লোকজন বাসে উঠতে না পেরে কিছুক্ষণ রাস্তা আটকে রাখে। বুধবারও একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি বলেন, উত্তরা বা গাজীপুর থেকে যেসব গাড়ি আসে সেগুলোতে যাত্রী বোঝাই করে দরজা আটকানো থাকে। খিলক্ষেত ও আশপাশ এলাকার যাত্রীরা বাসে উঠতে পারেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। সোলাইমান মিয়া নামের একজন বলেন, সরকারের উচিত ছিল খিলক্ষেত থেকে কয়েকটি রুটের জন্য বিআরটিসির বাস বরাদ্দ দেয়া। তাহলে এসব ভোগান্তি হতো না। খিলক্ষেত থানার এসআই শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী বহনের নিয়ম করা হয়েছে। ফলে সকালে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ গিয়ে যাত্রীদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাস্তা আটকে রাখে বলে জানান তিনি। মিরপুরের যাত্রী মো. শিহাবউদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি। যাত্রা শুরুর থেকেই বাসগুলো যাত্রী ভরে নিয়ে আসছে। বাসের এমন সংকটের সময়ে টেম্পোতে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। তিনি বলেন, মিরপুর-২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাদুড়ঝোলা হয়ে গেছি। আগে এপথে ১২ টাকা ভাড়া নিত। এখন তা বেড়ে ২০ টাকা আদায় করছে। বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে টেম্পোতে যেতে হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ করে আরও কয়েকজন যাত্রী বলেন, বাসের সংকটের সুযোগে সিএনজি অটোরিকশাগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। দূরপ